বিডিটাইম ডেস্ক
ঢাকা শহরের ভবনগুলোর গুণগত মান অত্যন্ত দুর্বল, যা বড় ধরনের ভূমিকম্পে ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. রাকিব আহসান। তিনি বলেন, “ঢাকা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। বিগত ১০০ বছরে বড় ভূমিকম্প না হলেও ভবিষ্যতে বড় ঝুঁকি রয়েছে। ঢাকার অধিকাংশ ভবনের মান খুবই খারাপ। এসব দুর্যোগ থেকে বাঁচতে ভবনগুলোকে নিরাপদ করতে হবে। বিল্ডিং কোড ও অন্যান্য আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা জরুরি।”
মঙ্গলবার (৬ মে) সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘ভূমিকম্প ও অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলায় উপযোগী ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা।
সেমিনারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, “প্রতিটি ভবন হতে হবে নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও দুর্যোগ সহনশীল। রাজউককে তদারকি জোরদার করতে হবে। নির্মাণ পর্যায়ে গুণগত মান নিশ্চিত করতে একটি আধুনিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। ভবনের মালিক, প্রকৌশলী, স্থপতি ও ঠিকাদারদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে।”
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের সমাজে আইন না মানার সংস্কৃতি রয়েছে, যা নিরাপদ নগর গড়ার পথে প্রধান বাধা। প্রভাবশালীরা আইন অমান্য করে ভবন নির্মাণ করেন, এতে রাজউকের কর্মকর্তারাও অসহায় হয়ে পড়েন।”
রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “ঢাকা শহর এখন নানা দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। একাধিক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে সমস্যার সমাধান করা কঠিন হয়ে পড়ছে। রাজউক এখন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে, তবে পর্যাপ্ত জনবল ও পুলিশ সহায়তা না পাওয়ায় কাজ ব্যাহত হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আইন করা সহজ, বাস্তবায়ন কঠিন। ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার মতো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজউক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবে ভবিষ্যতে কোনো নতুন ভবন অনুমোদিত নকশা ছাড়া নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।”
সেমিনারে জাইকার প্রতিনিধি কবুতা ‘ইম্প্রুভমেন্ট অব ডিজাইন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোয়ালিটি ফর রেজিলিয়েন্স অব প্রাইভেট বিল্ডিং (DCQR)’ প্রকল্পের রূপরেখা উপস্থাপন করেন। রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) মো. হারুন অর রশিদ স্বাগত বক্তব্য দেন এবং ড. রাকিব আহসান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
দিনব্যাপী সেমিনারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, রিহ্যাব, স্থপতি, প্রকৌশলী, নগর পরিকল্পনাবিদসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।