Top 5 This Week

বেরোবির ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটে দুদকের অভিযান

Spread the love

বেরোবি প্রতিনিধি

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অফিসে অনিয়মিত উপস্থিতি এবং কার্যক্রমহীন অবস্থায় নিয়মিত বেতন গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান পরিচালনা করে।

বুধবার (১২ মার্চ) দুদক রংপুরের সহকারী পরিচালক মো. হুসাইন শরিফের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করে। অভিযানের সময় তিনি জানান, ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জলিল মিয়ার উদ্যোগে ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর কয়েকজন গবেষণা অফিসার ও ফেলো নিয়োগ দেওয়া হলেও অনুমোদন ও নীতিমালার অভাবে তাদের গবেষণা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়নি। এছাড়া, বর্তমানে ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী তেমন কোনো কাজ ছাড়াই নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুদক এ বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করে কমিশনে পাঠাবে, যা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কাজে লাগবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০২২ সালে ইনস্টিটিউটের গবেষক ভর্তির অনুমোদন না থাকায় বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। বেরোবির ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, বর্তমানে এখানে সাতজন কর্মকর্তা, একজন কম্পিউটার অপারেটর এবং একজন এমএলএসএস কর্মরত আছেন। কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার খন্দকার গোলাম মোস্তফা, প্রিন্সিপ্যাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড. প্রসন্নজিৎ সরকার, সাবেক উপাচার্যের মেয়ে রুমানা ফেরদৌসী জলিল, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রফিউল আজম খানের স্ত্রী ডেপুটি রেজিস্ট্রার সিরাজুম মুনিরা, সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু সায়েম, সিনিয়র রিসার্চ অফিসার মেহজাবিন ইলাহী এবং রিসার্চ অফিসার ড. মো. রোকনুজ্জামান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিপত্র অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দশম সিন্ডিকেট সভায় ইনস্টিটিউটটি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ২০১১ সালের ৩ নভেম্বর ২০তম সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে গবেষণার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন না থাকায় এ ভর্তি কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এমনকি ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই তৎকালীন উপাচার্য ড. আব্দুল জলিল মিয়া তার মেয়েকে গবেষক হিসেবে নিয়োগ দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

২০১১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে মোট ২০৫ জন গবেষক ভর্তি হলেও অনুমোদনের জটিলতায় কার্যক্রম ব্যাহত হয়। ২০২২ সালের পর থেকে ইনস্টিটিউট কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে অনিয়মিত উপস্থিতি সত্ত্বেও নিয়মিত বেতন পেয়ে আসছেন।

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও গবেষণা কার্যক্রমের অভাব, অভিযোগ রয়েছে, রিসার্চ অফিসার ড. মো. রোকনুজ্জামান গবেষণা কার্যক্রমে সক্রিয় না থাকলেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ানো নিষিদ্ধ হলেও, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে ভবিষ্যতে আরও কর্মকর্তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট এবং গবেষণা বিষয়ক প্ল্যাটফর্ম ‘রিসার্চগেট’ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অধিকাংশ কর্মকর্তার উল্লেখযোগ্য কোনো গবেষণা নেই। কেবলমাত্র ড. প্রসন্নজিৎ সরকার ও সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু সায়েমের কয়েকটি গবেষণা নিবন্ধ পাওয়া গেছে। বাকিদের গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, “আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর জানতে পারি, আমি নিজেই ইনস্টিটিউটের পরিচালক। বিষয়টি জানার পর আমি তদন্ত শুরু করি। শুরুতে ইনস্টিটিউটের কোনো অনুমোদন ছিল না, তবে ২০২৪ সালের মে মাসে অনুমোদন দেওয়া হয়। এখনো এর নীতিমালা চূড়ান্ত হয়নি, যা তৈরি করার জন্য আমি কাজ করে যাচ্ছি।”

দুদকের তদন্তের ফলে ইনস্টিটিউটের কার্যক্রমে কোনো পরিবর্তন আসবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও গবেষণা কার্যক্রমের অভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বচ্ছতা ও শিক্ষার মানের প্রশ্ন তুলেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish