কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসুয়া ইউনিয়নের মসুয়াগ্রামে বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়িতে বসেছে ঐতিহাসিক বৈশাখি মেলা। প্রায় দুইশত বছর আগে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরিকিশোর রায় চৌধুরি ‘কালভৈরবী পূজা’ উপলক্ষ্যে এ মেলার সূচনা করেন। চলতি বছর বুধবার (১৫ মে) থেকে শুরু হয়েছে পাঁচদিনব্যাপী এ আয়োজন।
বৈরী আবহাওয়া সত্ত্বেও মেলা প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে উঠেছে দর্শনার্থীদের ভিড়ে। মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের কয়েকটি গ্রামে বইছে উৎসবের আমেজ। এতে অংশ নিয়েছে শতাধিক ব্যবসায়ী, বসেছে নানা ধরনের দোকান, নাগরদোলা, মিষ্টান্ন ও প্রসাধনীর স্টল। গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতি তুলে ধরতে মেলায় রয়েছে কাঠের আসবাব, গৃহস্থালি পণ্য, খেলনা, ও ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের সমাহার।
মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি গোলাপ মিয়া বলেন, “প্রায় দুইশ বছরের এই মেলা এখন আমাদের এলাকার সম্প্রীতির প্রতীক। প্রতি বছরই এর আয়োজনে আমরা নতুন উদ্যম পাই।”
কমিটির সদস্য সচিব আবদুল কুদ্দুস রতন জানান, “এবারের মেলা সুশৃঙ্খলভাবে এবং মনোরম পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দর্শনার্থী ও অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা সফলতা পেয়েছি।”
মেলা ঘিরে প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে কবি, সাহিত্যিক ও বহু দর্শনার্থী আসেন। এবারও মেলায় থাকছে গান ও কবিতা পাঠের আসর। স্থানীয় শিক্ষক ও বাসিন্দারা জানান, এই মেলা শুধু বিনোদন নয়, এটি এখন সংস্কৃতির ধারকও বটে।
মেলা উপলক্ষ্যে এলাকা পরিদর্শন করেন কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাঈদুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. রুহুল আমীন আকিল, উপজেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপসহ আরও অনেকে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মেলার সরকারি ডাক হয়েছে ৭১ হাজার ৭শত টাকা। কটিয়াদী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, “মেলায় আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, এই মেলা সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের উদ্যোগে শুরু হয়। যদিও বর্তমানে ‘কালভৈরবী পূজা’ হয় না, তবে মেলার ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত। রায় বাড়ির বিশাল খোলা মাঠ ও পুকুরপাড়জুড়ে বসে মেলাটি। এখানেই জন্মগ্রহণ করেন সত্যজিতের পিতামহ শিশু সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী (১৮৬০) এবং পিতা ছড়াকার সুকুমার রায় (১৮৮৭)। ভারত বিভক্তির আগেই পরিবারটি কলকাতায় চলে যায়। বর্তমানে তাদের প্রাচীন পৈতৃক বাড়িটি বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে আংশিক সংস্কার করা হয়েছে।