Top 5 This Week

সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে চাপে অন্তর্বর্তী সরকার

বিডিটাইম ডেস্ক

সরকারি কর্মচারীদের বিক্ষোভ চলমান অবস্থায় এবার আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর বিরুদ্ধে টানা আন্দোলন, বেতনবৃদ্ধির দাবিতে শিক্ষক ধর্মঘট এবং প্রশাসনিক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ঘিরে সাম্প্রতিক এই অসন্তোষে চাপে পড়েছে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নানা সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তবে এই মুহূর্তে তাঁকে একযোগে সামলাতে হচ্ছে সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, রাজনৈতিক দল এবং সামরিক বাহিনীর চাপ।

সরকার রোববার একটি অধ্যাদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছাড়াই অসদাচরণের অভিযোগে সরকারি কর্মচারীদের বরখাস্তের ক্ষমতা দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত তিন দিন ধরে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের হাজারো কর্মকর্তা-কর্মচারী বিক্ষোভ ও কর্মসূচি পালন করছেন। তাঁরা এই অধ্যাদেশকে ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে এর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার দাবি করেছেন।

এদিকে, বেতন বৈষম্য নিরসন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবিতে সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে গেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এতে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

এ পরিস্থিতির মধ্যে রবিবার সরকারের আরেকটি সিদ্ধান্তও প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে এনবিআরের কর্মীদের আন্দোলনের মুখে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকায় শীর্ষ ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস ইঙ্গিত দেন, সংস্কার ও নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে ঐকমত্যে না পৌঁছালে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন। তবে সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগ করছেন না। বরং তিনি প্রতিবন্ধকতা স্বীকার করলেও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এর মধ্যে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে, আর ইউনূস সরকার বলছে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সম্প্রতি বলেছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়া উচিত। তাঁর বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।

শনিবার অধ্যাপক ইউনূস জরুরি উপদেষ্টা সভা করেন এবং বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত হওয়ায় দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রোববার বলেন, ‘আমরা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে আছি।’ তিনি দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে নানা চক্রান্ত চলছে।’

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ, রাজনৈতিক চাপ, শিক্ষকদের ধর্মঘট ও প্রশাসনিক অস্থিরতার এ সমন্বিত চাপে সরকার কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবে, এখন সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish