বিডিটাইম ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) দীর্ঘ ১৬ বছরের তথাকথিত ফ্যাসিবাদী শাসনকালে হিজাব পরিহিত শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধকে শ্রদ্ধা জানিয়ে হিজাবকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতীক’ ঘোষণা করেছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ।
রোববার (২৫ মে) সকাল ১০টায় ঢাবি শাখার উদ্যোগে আয়োজিত ‘Celebrating Women’s Dignity and Pride 2025’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাবি শাখার আহ্বায়ক সানোয়ারা খাতুন এবং উদ্বোধন করেন হিজাব পরার কারণে সুফিয়া কামাল হল থেকে বিতাড়িত ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সাবেক কেন্দ্রীয় নেত্রী মরিয়ম জামিলা তামান্না।
বক্তারা জানান, হিজাব পরা শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন, তা শুধু ধর্মীয় অধিকারের লঙ্ঘন নয় বরং রাষ্ট্রীয় ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। অনুষ্ঠানে দাবি করা হয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে হিজাবধারী শিক্ষার্থীদের ভূমিকার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে এবং ‘হিজাব সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করে নিপীড়ন ও বৈষম্যকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার নিবন্ধিত নারী শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম ধাপে পাঁচ শত জনের হাতে ‘প্রতিরোধ ও সম্ভ্রমের প্রতীক’ হিসেবে হিজাব তুলে দেওয়া হয়। অন্য শিক্ষার্থীদের মাঝে চকলেট ও কলম বিতরণ করা হয়। আয়োজকরা জানান, দ্বিতীয় ধাপে বাকি শিক্ষার্থীদের মাঝেও হিজাব বিতরণ করা হবে।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিনা তামান্না অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ক্লাসে নিকাব পরার কারণে এক শিক্ষক তাকে অপমান করেছিলেন এবং পরবর্তীতে পরীক্ষা ও ভাইভায় নিকাব খুলতে বাধ্য করা হয়েছিল। তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী নাফিসা ইসলাম সাকাফি বলেন, “অধিকার আদায়ে কথা না বললে, যারা প্রতিবাদ করতে চায়, তাদের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। অধিকার নিয়ে কথা বলার দায়িত্ব শুধু ভাইদের নয়, আমাদেরও।”
‘প্রোটেস্ট অ্যাগেইনস্ট হিজাবফোবিয়া ইন ডিইউ’র সদস্য হাবিবা মাহজাবিন জ্যোতি বলেন, “পর্দা মুসলিম নারীর আত্মপরিচয়ের অংশ। অথচ একে জঙ্গিবাদের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে একটি হিজাববিরোধী মানসিকতা তৈরি করা হয়েছে।”
অনুষ্ঠানে নারী অধিকার নিয়ে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, ইসলামে নারীদের মর্যাদা অনুসারে রাষ্ট্রের উচিত তাদের বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করা, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চশিক্ষায় বিশেষ বৃত্তি, বিনা সুদে শিক্ষাঋণ, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিনামূল্যে চিকিৎসা, নারীবান্ধব পরিবহণ ব্যবস্থা ও সম্পত্তিতে ইসলামী অধিকার বাস্তবায়ন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জি এ গাউস, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. বেলাল হোসাইন, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির শায়খুল হাদিস আহমদ আলী কাসেমী, গবেষক মূসা আল-হাফিজ, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের মুখপাত্র শাহরিন ইরা, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ ও জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
দিনব্যাপী এই আয়োজনে শিক্ষার্থীরা হিজাব ও নিকাব নিয়ে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। কেউ কেউ প্ল্যাকার্ডে লেখেন, ‘হিজাব হোক প্রতিরোধের প্রতীক’, ‘আমার সোনার বাংলায় হিজাব বৈষম্যের ঠাঁই নেই’।
আয়োজকদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই উৎসব ছিল হিজাব নিয়ে দীর্ঘদিনের বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদের ভাষ্য।