বিডিটাইম ডেস্ক
বাজারদরের চেয়ে প্রায় দশ গুণ বেশি দামে নিম্নমানের ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) কেনার অভিযোগ উঠেছে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা-সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এতে সরকারের প্রায় ৩১৭২ কোটি টাকার ক্ষতি বা আত্মসাৎ হয়েছে বলে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি বিধি উপেক্ষা করে কোনো সমীক্ষা, দরপত্র ছাড়াই নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রায় দেড় লাখ ইভিএম সেনাবাহিনীর মেশিনটুলস ফ্যাক্টরি থেকে সরাসরি ক্রয় করা হয়। এ জন্য ডেলিগেটেড পারচেজ পদ্ধতিতে সেনাবাহিনীকে আদেশ দেওয়া হয়, যারা পরে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ করে।
দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রাকিবুল হায়াতের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বিশেষ টিম চলতি বছরের ২০ মার্চ থেকে অনুসন্ধান শুরু করে। ইতিমধ্যে গত বুধবার নির্বাচন কমিশনের ছয় কর্মকর্তাকে তলব করা হয়, যাদের মধ্যে তিনজন হাজির হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, আর তিনজন অনুপস্থিত ছিলেন।
দুদক যে তিনজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তারা হলেন—মো. ফরহাদ হোসেন, উপসচিব (চলতি দায়িত্ব), মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, সিনিয়র মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার, ফারজানা আখতার, সিস্টেম এনালিস্ট । হাজির না হওয়া তিনজন হলেন—মো. সাইফুল হক চৌধুরী, উপপ্রধান, মো. মাহফুজুল হক, সহকারী প্রধান এএইচএম আব্দুর রহিম খান, আইটি সিস্টেম কনসালট্যান্ট।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম জানান, “ইভিএম ক্রয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। এর অংশ হিসেবে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী আরও সংশ্লিষ্টদের ডাকা হবে।”
এদিকে, দিনের ভোট রাতে দেওয়ার অভিযোগে গত ২২ জুন সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ ও দুদক একযোগে তদন্ত করছে।
দুদকে জমা দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, এই দুর্নীতির সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক-সহ আরও কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ইভিএম প্রকল্পে এই বিপুল অর্থ আত্মসাতের তথ্য প্রকাশ পায়।
দুদক আরও জানায়, নির্বাচন কমিশন আইন লঙ্ঘন করে শুধু বাজারদর কমিটির প্রস্তাব আমলে নিয়ে ইভিএমের দাম নির্ধারণ করা হয়। নিজেরা কোনো বাজারদর যাচাই কমিটি গঠন করেনি। এর ফলে প্রতিটি ইভিএমে বাজারমূল্যের তুলনায় অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্য গুনে সরকারকে বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
দুদক নির্বাচন কমিশন ও সেনাবাহিনীর কাছ থেকে প্রাথমিক কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে। অনুসন্ধানের পর প্রতিবেদন তৈরি করে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।