Top 5 This Week

বাকৃবির ডরমেটরির উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে প্রায় ৩ কোটি টাকা গড়মিলের অভিযোগ

বাকৃবি প্রতিনিধি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) পরমানু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া পিএইচডি ডরমেটরি ভবনের উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চলমান। পূর্বের একতলা ভবনটির দ্বিতীয় তলা নতুন করে নির্মাণ এবং নিচতলা সংস্কার (সিভিল, সেনেটারি ও বৈদ্যুতিক) মিলিয়েই শিডিউলে পুরো আর্থিক হিসাব দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৩৮ লাখ ১৮ হাজার ১০ টাকা। আর্থিক হিসাব নিচতলা এবং দ্বিতীয় তলা উভয়ের জন্য হলেও আর্থিক স্বল্পতার কারণে বর্তমানে কেবল দ্বিতীয় তলা নির্মাণের কাজ চলমান। এদিকে কাজের শিডিউলে ভবন নির্মাণে ইটের কাজ, প্লাস্টার এবং রডসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান সামগ্রীতে ২ থেকে ৩ গুণ পর্যন্ত অতিরিক্ত এবং কিছু ক্ষেত্রে একই উপাদান দুইবার করে ধরে হিসাব করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশ^বিদ্যালয়ে কর্মরত একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা। নেই কোনো ফাউন্ডেশনের কাজ, শুধু ২য় তলা তৈরিতেই এতো টাকা কেনো লাগছে? এমন গড়মিলের বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীগণ ও কাজের মনিটরিং কমিটির সদস্যরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিযোগকারীরা তাদের অভিযোগে বলেন, শিডিউলে অতিরিক্ত ইটের ব্যবহার, অতিরিক্ত রডের ব্যবহার, ঢালাই কাজে অতিরিক্ত বিল তৈরি, অতিরিক্ত সিমেন্টসহ সব কিছুতেই অতিরিক্ত ব্যয়ের বাজেট ধরা হয়েছে। যেখানে অর্ধেক পরিমাণ উপাদান সামগ্রী দিয়ে কাজ করা সম্ভব সেখানে অতিরিক্ত সামগ্রীর হিসাব দেখিয়ে ব্যয়ের বাজেট করা হয়েছে।

এছাড়াও অভিযোগে আরও জানানো হয়, পুরো কাজের শিডিউলে ফ্লোর তৈরিতে অতিরিক্ত টাইলস ধরা হয়েছে এবং দুইবার করে সেটির ব্যয় দেখিয়ে হিসাব করা হয়েছে। প্লাস্টিক ও কাঠের দরজার চৌকাঠ তৈরিতেও অতিরিক্ত বাজেট ধরা হয়েছে। এমনকি দরজার হিসাব সংখ্যায় না করে কাঠ বা প্লাস্টিকের পরিমাণ (বর্গ ফুট) দিয়ে বাজেট করা হয়েছে যেখানে সাধারণত দরজার বিষয়টি সংখ্যায় হিসাব করা হয়। নিচ তলার সংস্কারের জন্যে আলাদা বাজেট করা আছে তবুও তারা নিচ তলার কাজ করছে না। নিচ তলার বাজেটও ওপর তলার কাজে ব্যয় করা হবে। তাহলে এতো টাকা দিয়ে কি কাজ হচ্ছে?

এ বিষয়ে ওই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্ত: নির্মাণ ও সংরক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিডিউল তৈরির সময় ভুলবশত প্রথম ও দ্বিতীয় তলার কাজ এক তালিকায় করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে এটি সংশোধন করা হয়েছে। বাজেট স্বল্পতার কারণে প্রথম তলার সংস্কার কাজ কিছুটা কমানো হয়েছে। দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ হওয়ার পর যদি বাজেট অবশিষ্ট থাকে তাহলে সেই অর্থ দিয়ে প্রথম তলার সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।

বিভিন্ন কাজে অতিরিক্ত উপাদান সামগ্রীর হিসাব দেখানোর অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রথমে যেকোনো কাজ করার ক্ষেত্রে একটি আনুমানিক হিসাব তৈরি করি। পরবর্তীতে যতটুকু কাজ করা হয় সেই কাজের প্রকৃত ব্যয়ের হিসাব তৈরি করে বিল তৈরি করি। এখানে অতিরিক্ত সামগ্রী দেখিয়ে বিল করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা যে কাজ করছি সবই দৃশ্যমান। যে কেউ দেখলেই কাজের পরিমাণ ও গুণগত মান বুঝতে পারবেন। বিশ^বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজগুলো যাতে বন্ধ হয়ে যায় এ কারণে একটি চক্র এসকল মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, যেহেতু এটি ভবন নির্মাণ বিষয়ক কাজ তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন। তবে আমাকে যতটুকু হিসাব দেখানো হয়েছে এবং আমি ওই নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে কাজের পরিমাণ যতটুকু পেয়েছি তাতে উপাদানের হিসাবে গরমিল আছে বলে আমার মনে হয় নাই। তবে গড়মিলের সঠিক প্রমাণ কেউ দিতে পারলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহীন ইসলাম খান বলেন, কাজ যতটুকু হচ্ছে সবটুকুই দৃশ্যমান। এখানে কারচুপির কোনো সুযোগ নাই। প্রথমবার শিডিউল তৈরির সময় নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার কাজ একসাথে ধরে শিডিউল করার কারণে টাইলস, প্লাস্টারসহ কিছু কাজের হিসাব দুইবার করে চলে এসেছিল। এখন যেহেতু আগে দ্বিতীয় তলার কাজ করতে হচ্ছে তাই ওই শিডিউল সংশোধন করা হয়েছে। আমরা মনিটরিং কমিটির সাথেও আলোচনা করেছি।

তাদেরকে আমাদের সকল কাজের পরিমাণ ও গুনগতমানের হিসাব দেখিয়েছি। এসকল কাজের ক্ষেত্রে সামগ্রীর পরিমাণ আগেই শতভাগ সঠিকভাবে অনুমান করা সম্ভব নয়। তবে পূর্ব অনুমানের ভিত্তিতে কখনোই কোনো বিল করা হয় না। যতটুকু কাজ প্রকৃতপক্ষে হচ্ছে ঠিক ততটুকুরই বিল দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে ওই কাজের মনিটরিং কমিটির সভাপতি এবং উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কমিটির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান বলেন, শিডিউল তৈরির সময়ে নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার কাজে কিছু উপাদান একই থাকায় ওগুলো দুবার করে এসেছিল। যেকোনো স্থাপনার ক্ষেত্রে সামগ্রী বা বিভিন্ন কাজের যে পূর্ব অনুমান করা হয় তা শতভাগ সঠিক হিসাব করা সম্ভব নয়।

প্রকৃত কাজের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি বা কমের মধ্যে থাকলে সেই অনুমানকে সঠিক হিসেবেই ধরা যায়। প্রকৌশলীদের সাথে মনিটরিং কমিটির আলোচনায় তাঁদের প্রকৃত কাজের যে হিসাব আমরা করেছি তার সাথে তাঁদের দেওয়া পূর্ব অনুমানের তুলনা করলে দেখা যায় যে প্রকৃত কাজ পূর্ব অনুমানের প্রায় ২ থেকে ৩ শতাংশ বেশি বা কোথাও আবার কম। তাই তাঁদের কাজে বা হিসাবে গরমিল আছে সেটি বলার কোনো সুযোগ নাই। প্রত্যেকটি কাজের যথাযথ হিসাব তাঁরা আমাদের দিয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish