Top 5 This Week

নিজেকে বদলে ফেলুন এই রমজানে

আল্লাহ্ সুবহানওয়াতা’আলা রমাদানকে ফরজ করেছেন। যেন আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারি। আপনি চাইলেই তো লুকিয়ে কিছু খেয়ে নিতে পারেন, তাই না? তাও সংযম করছেন। কেন? কারণ আপনি জানেন, কেউ না দেখলেও আমাদের রব ঠিকই দেখছেন। উনার ভয়ে আপনার লোভাতুর চোখ ইফতারের প্রহর গুনছে। ওজু করার সময় খুব খেয়াল রাখছেন যেন পানি পেটে না ঢুকে পড়ে! আল্লাহর ভয় এবং উনার ভয়ে ‘ভুল-ত্রুটি থেকে সচেতন থাকা’ এটাই হচ্ছে তাকওয়া।

শাইখ মূসা জিবরীল উনার Gems of Ramadan লেকচারে সুন্দর বলেছেন, রমাদান হচ্ছে বুট ক্যাম্প এর মতো। এখানে আপনি ‘হালাল’ খাবার থেকে, স্ত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গতা থেকে নিজেকে বিরত রাখছেন, আল্লাহর আদেশে। এই ট্রেইনিং থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনাকে আগামী ১১ মাস অবশ্যই ‘হারাম’ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। আল্লাহ্‌র রসূল (ﷺ) বলেন আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেছেন, সওম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তাঁর নিজের জন্য, কিন্তু সিয়াম আমার জন্য। তাই আমি এর প্রতিদান দেব।সিয়াম ঢাল স্বরূপ।

তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া বিবাদ না করে। যদি কেউ তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সায়িম [5(http://ihadis.com/books/bukhari/hadis/1904)] আপনার অন্তরে যত ভালোভাবে তাকওয়া সিলমোহর বসবে, আপনি তত সচেতন থাকবেন। নিশ্চয়ই সালাত বিরত রাখে আল-ফাহশা (সব ধরনের কবীরা গুনাহ, অশ্লীলতা) এবং আল-মুনকার (কুফর, শির্ক ও অন্যান্য শয়তানি কাজ) থেকে।’ (আল-আনকাবুত, আয়াত ৪৫)

আল্লাহ্‌ বলছেন, সালাত আমাদেরকে বাঁচাবে সকল প্রকার ফাহেশাত থেকে। কিন্তু কীভাবে?
মাথায় আসে না অনেকের।সালাতে সূরা ফাতিহা তো পড়া লাগেই, তাই না? ফাতিহার ৫ নম্বর আয়াতের অর্থটা দেখুন, আমরা এখানে সাক্ষ্য দিচ্ছি إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ – ‘আমরা আপনারই ইবাদত করি, আপনার কাছেই সাহায্য চাই’। এভাবে আমরা জীবনের সব ক্ষেত্রে আল্লাহর অনুগত হয়ে চলার ওয়াদা করছি! এখন কীভাবে এ ওয়াদা ভঙ্গ করা সম্ভব? যখনই কোন গুনাহ করতে ইচ্ছা হবে এই ওয়াদার কথা মাথায় রাখুন। এভাবেই আপনি রক্ষা পাবেন ফাহেশাত থেকে। [তাফসীরে তাওযীহুল কোরআন, ২য় খন্ড, পৃঃ ৫৭৫ এর ভাবার্থ]

রমাদানে সালাতের বিশেষত্ব কী?

এই পবিত্র মাসে আমরা শুধু ৫ ওয়াক্ত ফরজ, সুন্নাতে মুয়াকাদ্দাহ সালাতগুলো পড়ি তা না, এর পাশাপাশি আমরা তারাবীহ পড়ি, তাহাজ্জুতও পড়ি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি। কিয়ামুল লাইলের খাতায় শুধু ২০ রাকাত তারাবীহ যোগ করলে, এই মাসেই প্রতিদিন অন্তত ৫২ রাকাত সালাতে আপনি ৫২ বার সূরা ফাতিহা পড়ছেন বা শুনছেন (ইমামের ইক্তিদা করে)।

-এভাবে আল্লাহর দিকেই বারবার রুজু করছেন, আল্লাহর সাথে ওয়াদা করছেন যে, একমাত্র উনার কথামতোই আপনি চলছেন, চলবেন। এই আল্লাহর ভয়, উনার ক্ষমা পাওয়ার জন্য করা আপনার সব ইবাদত, উনারই কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ। আপনাকে হেদায়াতের পথ দেখাবে, বিইযনিল্লাহ। . অনেক কিছু বলে ফেললাম ভাই। মাঝে মাঝে বলতে ইচ্ছা করে। আমরাও আপনাদের মতোই ইনসান। এক গুনাহগার বান্দা। আল্লাহ্কে নাখোশ করে ফেলি শয়তানের ধোঁকায়। আসেন মিলেমিশে নসিহতের মাধ্যমে দুনিয়ার জিন্দেগিটা পার করি ইমান নিয়ে।

 এ পর্ব শেষ করছি দুটো হাদিস মনে করিয়ে দিয়েঃ

– নবিজি (ﷺ) বলেছেন: ‘‘যখন রমাযান মাসের প্রথম রাত হয়, শয়তান ও অবাধ্য জীনদেরকে বন্দী করা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহকে বন্ধ করে দেয়া হয়। এর একটিও খোলা রাখা হয় না। এদিকে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। একটিও বন্ধ রাখা হয় না। আহ্বানকারী (মালাক বা ফেরেশতা) ঘোষণা দেন, হে কল্যাণ অনুসন্ধানকারী! আল্লাহর কাজে এগিয়ে যাও। হে অকল্যাণ ও মন্দ অনুসন্ধানী! (অকল্যাণ কাজ হতে) থেমে যাও। এ মাসে আল্লাহ তা‘আলাই মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করেন এবং এটা (রমাযান (রমজান) মাসের) প্রত্যেক রাতেই হয়ে থাকে।’’ [7 (http://www.ihadis.com/books/mishkatul-masabih/hadis/1960)] জিবরাইল (আ.) দুয়া করেছেন, “ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যে রমজান মাস পেল, তবুও তার গুনাহ মাফ হল না।” উত্তরে নবীজি (ﷺ) বললেন, ‘আমীন’। [8 (https://www.alkawsar.com/bn/article/641/)] . ‘ধ্বংস’, নয়তো ‘মুক্তি’…
এই রমাদান শেষে আমাদের পরিণতি হবে এই দুইটার যেকোনো একটা। মাথায় গেঁথে নিন ভালো করে। (চলবে)….

 

লেখা: তাসাউফ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish