Top 5 This Week

নিজেকে বদলে ফেলুন এই রমজানে

 

বিডিটাইম ডেস্ক

রমাদান মুবারাক। এই রমাদান হোক আপনাদের বদলে যাওয়ার প্রথম রমাদান। যেন পরের বছর রমাদানের এমনি কোনো পবিত্র রাতে আল্লাহর কাছে সিজদাহতে লুটিয়ে শুকরিয়ার অশ্রু বইয়ে দিতে পারেন আর বলতে পারেন, ‘ইয়া আল্লাহ্‌! আপনিই আমাকে গত বছর হিদায়াতের সন্ধান দিয়েছিলেন! আমাকে মুক্ত করেছেন চোরাবালি থেকে…’।

এমন পরিবর্তন আসা সম্ভব, সত্যিই সম্ভব।হয়তো ভাবছেন মিথ্যা সান্ত্বনা দিচ্ছি। রোজা তো রাখি ঠিকই, কই লাভ তো হয় না!

ভাইরে, রোজা রাখার পাশাপাশি যে সমান তালে চলে মিউজিক/ মুভি/ সিরিজ এটা বলছেন না কেনো? ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম স্ন্যাপচ্যাট টিকটক আরো কত সোশ্যাল (!) সাইটে যে নিজের স্মার্টনেস দেখাতে গিয়ে নষ্টামির দুয়ার খুলে রেখেছেন সেটাই বা বাদ যাবে কেনো? জাস্ট-ফ্রেন্ড, গার্ল-ফ্রেন্ডদের কথা আর নাই বা তুলি! এসব দিব্যি চালিয়ে ভাবছেন পর্ন-মাস্টারবেশনের ফাঁদ থেকে বেঁচে যাবেন?

যে ভাইয়েরা এটা ভেবে নিয়েছেন যে, স্রেফ উপোস থেকে স্ক্রিনে ললনাদের গিলে দিন পার করে দিবেন আর সামহাউ কোন একটা ‘মিরাকল’ ঘটে উনার পর্ন-মাস্টারবেশন আসক্তি মিটে যাবে, মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে!, তাদের থেকে চোখ নিচু হয়ে যাবে আর হিদায়াতের পথ তার সামনে উন্মুক্ত হয়ে যাবে!
– আপনারা বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন। স্রেফ না খেয়ে থাকলেই আপনি হিদায়াতের সন্ধান পাবেন না। এটা সাওম না, এভাবে রমাদান পার করলে আপনি কিছুই অর্জন করতে পারবেন না।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ
কেউ যদি সওম পালন করেও মিথ্যা বলা ও অপকর্ম ত্যাগ না করে, তাহলে তার পানাহার বর্জন করাতে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। [1] (http://www.ihadis.com:8080/books/abi-dawud/hadis/2362)

বরং এই উদাসীনতা, আল্লাহর হুকুম আহকামকে পাত্তা না দিয়ে গুনাহে নিমজ্জিত থাকা ডেকে আনে আজাব। এমন আজাবে কষ্ট পায় আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টি।

আল্লাহ্‌ বলেন,
“…নিশ্চিত জেনো, আল্লাহ্ কোনও জাতির অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন করেন না, যতক্ষন না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে…”
(আর-রা’দ, আয়াত ১১)

শাইখুল ইসলাম মুহাম্মদ তাকী উসমানী এই আয়াতের ব্যাখায় বলেন, এমনিতে আল্লাহ্ কোন জাতির ভালো অবস্থাকে মন্দ করে দেন না। কিন্তু যখন তারা আল্লাহর নাফরমানীতে অটল থাকে আর নিজেদের আমল-আখলাক সেরূপে বদলে ফেলে তখন তাদের উপর আল্লাহর আজাব এসে যায়। [2, তাফসীরে তাওযীহুল কোরআন, ২য় খন্ড, পৃঃ ১৩১]

একই প্রসঙ্গে হাদীসেও এসেছে যে, যখন পাপাচার অধিক পরিমাণে বেড়ে যাবে, কেউই আজাব থেকে রক্ষা পাবে না, মুমিনরাও না। [3 (http://ihadis.com/books/muslim/hadis/7129)]

তাহলে করণীয় কী? দেখেন ভাই, দুনিয়াবী জগতের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতে যেমন মেহনত দিতে হয়, তেমনি ‘রুহানী’ জগতের ক্ষেত্রেও একই মেকানিজম। আগে আপনি উদ্যোগ নিবেন, এরপর আল্লাহ্ আপনাকে টেনে বের করবেন মুছিবত থেকে।

হাদিসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ্ বলেছেন, ‘আমি সেইরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি তার সাথে থাকি, যখন যে আমাকে স্মরণ করে। আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার তওবায় তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি খুশী হন, যে তার মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া বাহন ফিরে পায়। আর যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। যে আমার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দুই হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। আর সে যখন আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয়, আমি তখন তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই।” [4 (http://www.ihadis.com:8080/books/hadis-somvar/hadis/1265)]

কিছু বুঝাতে পারলাম কি?
আগে আপনি আল্লাহর নিকট এগুবেন- আগে আপনি হারাম থেকে বের হবার সমাধান খুঁজতে আরম্ভ করবেন, আগে আপনি অন্তরকে বোঝাবেন, প্রবৃত্তিকে লাগাম পড়াবেন। এরপর, আপনার মেহনত, নিয়্যাহ এর বদৌলতে আল্লাহ্‌ আপনাকে বাঁচাবেন।
যদি বুঝে থাকেন, যদি আপনি আল্লাহর নাখোশ বান্দাদের দলভুক্ত হতে না চান, যদি প্রস্তুত থাকেন ময়লায় আচ্ছাদিত অন্তরকে ধুয়ে সাফ করতে, তাহলে এবার মনোযোগ দিয়ে পড়ুন রমাদানের উদ্দেশ্য-বিধায়।
‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’
(আল-বাকারা, আয়াত ১৮৩)

লেখা: তাসাউফ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish